বিটকয়েন একাউন্ট খোলার নিয়ম (create coinbase account) নিয়ে এটুজেড জানতে পারবেন এই লেখাটিতে।আমি জানি অনেকের আবার কয়েনবেস একাউন্ট নিয়ে জানার আগ্রহ রয়েছে। তাই এই আর্টিকেলে আরও থাকছে কয়েনবেস একাউন্ট খোলার নিয়ম বিস্তারিত।পরিশেষে জানাবো আজকের বাজার অনুযায়ী ১ বিটকয়েন বাংলাদেশের টাকায় কতো টাকা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক, আশা করি অনেক ভালো রয়েছেন। আপনারা অনেকেই আমাদের ওয়েবসাইটের বিগত কিছু আর্টিকেলে কমেন্ট করে জানিয়েছেন যে আপনারা বিটকয়েন একাউন্ট খোলার নিয়ম জানতে চান।তাই আপনাদের জন্য নিয়ে আসলাম বিটকয়েন একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে এই আর্টিকেলটি।তাই আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন আপনি বিটকয়েন নিয়ে অনেক নতুন নতুন তথ্য সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন।
বিটকয়েন কি (Bitcoin ki)?
আপনি যদি বিটকয়েন একাউন্ট খুলতে চেয়ে থাকেন তাহলে তার আগে আপনাকে জানতে হবে বিটকয়েন কি।যদি সাধারণ ভাবে বলতে চাই বিটকয়েন হলো একপ্রকার মূদ্রা বা কয়েন।তবে আমরা সচরাচর যেই মূদ্রা বা কয়েন ব্যবহার করি বিটকয়েন মোটেও সেরকম কোনো মূদ্রা বা কয়েন নয়।তাহলে আসলে বিটকয়েন কি?বিটকয়েন হলো এমন মূদ্রা বা কয়েন যা আমরা হাত দিয়ে ছুঁতে পারবো না কিন্তু ব্যবহার করতে পারবো এইরকম মূদ্রা বা কয়েন।
তবে উল্লেখ করার মতো বিষয় যে আমরা বিটকয়েন শুধুমাত্র ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবো।আপনি যদি ইন্ডিয়ান হয়ে থাকেন তাহলে আপনি রুপি অথবা আপনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনি টাকা যেভাবে দুইহাত দিয়ে খরচ করতে পারেন বিটকয়েন আপনি সেইভাবে খরচ করতে পারবেন না। তাই বিটকয়েনকে বলা হয়ে থাকে ডিজিটাল কারেন্সি। আবার অনেক বিশেষজ্ঞরা বিটকয়েনকে ইলেকট্রনিক মূদ্রা হিসেবে আক্ষায়িত করেছেন।
আশা করি ধারণা পেয়েছেন বিটকয়েন কি।তাহলে এখন মনে তো আরেকটি প্রশ্ন জেগে ওঠে সেটা হলো বিটকয়েন এর মালিক কে। এখানে একটা মজার তথ্য হলো বিটকয়েন এর কোনো মালিক নেই।কি অবাক হচ্ছেন?অবাক হওয়ার কিছুই নেই এটাই সত্যি। ঠিক যেমন আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করি কিন্তু ইন্টারনেট এর কোনো মালিক নেই তেমনি আমরা সবাই চাইলে বিটকয়েন ব্যবহার করতে পারবো কিন্তু বিটকয়েন এর কোনো মালিকানা নেই।কিন্তু আপনি যদি বিটকয়েন ব্যবহার করতে চান বা বিটকয়েন এর সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে একটি বিটকয়েন একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে।
বিটকয়েন একাউন্ট খোলার পূর্বে আমাদের বিটকয়েন সম্পর্কে বেসিক কিছু কনসেপ্ট থাকা প্রয়োজন। যেমন বিটকয়েন কি বাংলাদেশ থেকে বৈধ? বিটকয়েন এর সুবিধা সমূহ কি ও ১ বিটকয়েন সমান বাংলাদেশের কতো টাকা এবং আপনি কিভাবে বিটকয়েন থেকে ইনকাম করবেন এইসব বিষয়। তাহলে চলুন এক এক করে সকল প্রশ্নের উত্তর জানা যাক।
এক বিটকয়েন সমান বাংলাদেশি কতো টাকা?
বাংলাদশি টাকা টাকায় বিটকয়েন এর দাম আসলেই অনেক বেশি।অনেক অর্থনৈতিকবিদ বলেছেন বিটকয়েন এর দাম ভবিষ্যতে আরও দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে যাবে। আপনি যদি এক বিটকয়েন এর দাম জানেন তাহলে আপনি আসলেই অবাক হয়ে যাবেন।
বিটকয়েন এর প্রচলন যখন শুরু হয়েছিলো অর্থাৎ ২০০৮ কিংবা ২০০৯ সালের দিকে ১(এক) ডলার দিয়ে ১৩০০ এর মতো বিটকয়েন কেনা সম্ভব হতো।আর সেই সময়ে ১ ডলার বাংলাদেশি টাকায় ছিলো মাত্র ৬৭ অথবা ৬৮ টাকা।কিন্তু ২০২২ সালে এসে এক বিটকয়েন এর দাম দাড়িয়েছে ৪৩৫৩০ ইউএস ডলার।যাকে আমরা যদি বাংলা টাকায় কনভার্ট করি তা ৩৭৪২৭২৬ টাকায় এসে দাড়ায়।
২০২২ সালে ১ বিটকয়েন এর দাম বাংলাদেশের টাকায় ৩৭ লক্ষ টাকার চেয়েও বেশি। তাহলে একবার কল্পনা করে দেখুন ২০৩০ সালে এসে ১ বিটকয়েন এর দাম বাংলাদেশের টাকায় কতো হতে পারে। কিন্তু সেই শুরুতে বিটকয়েন এর দাম এতো বেশি ছিলো না।২০০৮ – ৯ সালে আপনি চাইলে ৬ পয়সা দিয়েও একটি বিটকয়েন কিনতে পারতেন।
তবে বিটকয়েন এর দাম এতো বেশি দেখে আপনি আপনার সবকিছু দিয়ে একটি বিটকয়েন ভুলেও কিনবেন না।বিটকয়েন এর দাম শুধু বাড়ে এরকম নয়।বিটকয়েন এর দাম যেমন দ্রুত বাড়ে আবার সেইরকম কমেও যায়।তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক বিটকয়েন একাউন্ট কিভাবে খোলে বা বিটকয়েন একাউন্ট খোলার নিময়।
বিটকয়েন একাউন্ট খোলার নিয়ম।How To Create Coinbase Account
যেহেতু বিটকয়েন এর কোনো মালিক নেই সেহেতু বিটকয়েন এর পক্ষ থেকে অফিসিয়াল ভাবে বিটকয়েন একাউন্ট খোলার কোনো নিয়ম নেই। তবে কি আমরা বিটকয়েন একাউন্ট খুলতে পারব না? কেন পারবো না, অবশ্যই পারবো।আপনাকে বিটকয়েন এ একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে কয়েনবেস একাউন্ট খুলতে হবে।কেননা বিটকয়েন এ ট্রান্সজ্যাকশন করার জন্য আপনাকে কয়েনবেস ব্যবহার করতে হবে।আর এই বিষয় টা আসলেই অনেক সহজ।
Coinbase Account এর মাধ্যমে আপনি শুধু বিটকয়েন না অন্য সকল অনলাইন ওয়ালেট ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন।চলুন তাহলে আমরা একটি Coinbase Account তৈরি করে ফেলি।
• প্রথম ধাপঃ- প্রথমে একটি ব্রাউজার ওপেন করুন তারপর সার্চ করুন Coinbase লিখে।তারপর প্রথম ওয়েবসাইট তথা coinbase.com এই ওয়েবসাইট চলে যাবেন।
• দ্বিতীয় ধাপঃ- কয়েনবেস এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনি Get Started অপশনে ক্লিক করবেন।
• তৃতীয় ধাপঃ- Get Started অপশনে ক্লিক করার পর আপনি একটি রেজিষ্ট্রেশন ফরম দেখতে পাবেন। রেজিষ্ট্রেশন ফরমে আপনাকে আপনার First Name ও Last Name দিতে হবে। তারপর আপনাকে একটি ইমেইল দিতে হবে। সর্বশেষে আপনাকে একটি স্ট্রংগার পাসওয়ার্ড দিতে হবে। তারপর আপনি নিচের বক্সটিতে টিক মার্ক করে দিবেন।তারপর Create Account বাটনে ক্লিক করবেন।
• চতুর্থ ধাপঃ- আপনি প্রায় কয়েনবেস একাউন্ট তৈরি করার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন।এবার আপনাকে আপনার ইমেইল টি ভেরিফাই করতে হবে। আপনি একটু পূর্বেই যেই ইমেইলটি ব্যবহার করেছেন সেই ইমেইলটিতে একটি লিংক পাঠানো হবে। আপনি সেই লিংকে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনি আপনার একাউন্ট টি ভেরিফাই করতে পারবেন।
• চতুর্থ ধাপঃ- এরপর আপনার সামনে একটি ওয়েবপেজ আসবে যেখানে আপনাকে একটি বৈধ মোবাইল নম্বর যোগ করতে হবে। আপনি আপনার একটি বৈধ মোবাইল নম্বর এড করে দিবেন।
• পঞ্চম ধাপঃ- তারপর আপনি যেই বৈধ মোবাইল নম্বরটি এড করেছেন সেটাতে একটি কোড পাঠাবে কয়েনবেস থেকে।আপনি উক্ত কোডটি কয়েনবেস একাউন্টে সাবমিট করবেন।
এইতো আপনাকে অভিনন্দন। আপনি সফলভাবে কয়েনবেস বা বিটকয়েন একাউন্ট তৈরি করে ফেলেছেন।এরপর আপনার থেকে যেসব তথ্য চাওয়া হবে আপনি সকল তথ্য দিয়ে দিবেন। এখন আলোচনা করা যাক আমাদের দেশে কি বিটকয়েন বৈধ না অবৈধ।
বাংলাদেশে কি বিটকয়েন বৈধ?
আপনি যেহেতু বিটকয়েন নিয়ে এতো ইনফরমেশন জানলেন তাহলে এখন আপনার এটাও জানাও দরকার যে বাংলাদেশে কি বিটকয়েন বৈধ না অবৈধ।বলতে খরাপ লাগলেও বাংলাদেশে ২০১৪ সালে বিটকয়েন পুরোপুরি অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।তখন প্রশ্ন করতে পারেন বিটকয়েন কি বাংলাদেশের মানুষ অনেক ব্যবহার করতো? না,বাংলাদেশের খুব কম সংখ্যক মানুষই তখন বিটকয়েন সম্পর্কে জানতো।তারপরও বাংলাদেশে বিটকয়েনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তাহলে আপনার মনে আরও প্রশ্ন থাকতে পারে তা হলো বাংলাদেশে কেনো বিটকয়েনকে নিষিদ্ধ করা হলো?বিভিন্ন সংবাদকর্মীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তারাকে এই প্রশ্ন করলে তারা জানায় বাংলাদেশে বিটকয়েনকে বৈধ ঘোষণা করলে মানি লন্ডারিং হতে পারে। তাই বাংলাদেশে বিটকয়েনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আরও জানানো হয়েছে যে বিটকয়েন এর মাধ্যমে আমরা যদি কোনো লেনদেন করি সেই লেনদেনে ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি যদি কেউ বাংলাদেশ থেকে যদি কেউ বিটকয়েন এর সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে আর সেটা যদি বাংলাদেশ সরকার জানতে পারে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তাহলে এখন মূল কথা হলো বাংলাদেশে কি কখনো বিটকয়েনকে বৈধ করা হবে না?এটা একমাত্র বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া কেউই বলতে পারবে না।আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক যখন মনে করবে বিটকয়েন এ কোনো ঝুঁকি নেই তখন বাংলাদেশে বিটকয়েনকে বৈধ ঘোষণা করা হবে।
বিটকয়েন একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে সর্বশেষ কথা
বিটকয়েন যেহেতু বাংলাদেশে এখনও ব্যবহার করার কোনো অনুমতি নেই সেহেতু আপনি বিটকয়েন একাউন্ট খোলার আগে অনেক বার ভেবে নিবেন।আপনি যদি ভারত থেকে লেখাটি পড়ে থাকেন তাহলে আপনি বিটকয়েন একাউন্ট তৈরি করতে পারেন তাতে কোনো সমস্যা নেই।কারণ ভারতে বিটকয়েন বৈধ।আজকের আর্টিকেল এই পর্যন্তই।বিটকয়েন নিয়ে যদি আরও কিছু জানার থাকে সেটা কমেন্ট করে বলবেন আমরা আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ।